#পার্টঃ৭
#writerঃমৌসুমি_আক্তার
🌿
আমি রেগে মেগে বলে উঠি তুমি কত গুলা মেয়ের সাথে এগুলা করেছো শুনি।শান্ত ভাইয়া বলে প্রথম তোমার সাথেই করেছি।ঝগড়া করতে করতে দুজন সারারাস্তা এলাম।তারপর দুজন বাসায় ফিরলাম।সেই জুতাটা গেট এ দেখে আমার কাছে ব্যাপার টা সন্দেহের লাগে তাই আমি শান্ত কে কিছুই বলি না,, কারণ সন্দেহ টা আমার পিহু আপুকেই হচ্ছিলো যতই হোক শান্তর বোন তাকে এটা বলা ঠিক হবে না।মনে মনে রেখে পিহু আপু কে বলি আচ্ছা আপু ওই জুতা টা কার পিহু আপু বলে আমার।আচ্ছা তাহলে কি পিহু আপু পরশ ভাইয়ার রুমে ছিলো।
নাহ! ছিঃ
পিহু আপু এতটা খারাপ না। আবার পিহু আপু তো আজ কলেজ ও গেলো না তাহলে পিহু আপু গেলো কোথায়।আমি বেশী একটা চাপ নিলাম না পিহু আপুর কাছে আর কিছুই জানতে চাইলাম না।
আচ্ছা আপু কোথায় ছিলে আজ তুমি।
![]() |
একাত্ম ভালবাসা |
এইতো বান্ধবীর বাসায়।
তা কি খেলে।
এই চিকেন ফ্রাইড রাইস।
আমার চোখ দুইটা বড় বড় হয়ে গেলো কারন পরস ভাইয়ার বাসায় আমি আর শান্ত ও চিকেন ফ্রাইড রাইস খেয়েছি।আমাকে আর একটু বিষয় টা শিওর হতে হবে।এদিকে বাড়িতে পিহু আপুর বিয়ে নিয়ে ধুম পড়ে গেছে।আমি শান্তর বাইকে রোজ কলেজে যাওয়া আসা করছিলাম।এভাবেই চলছিলো বেশ কয়েক টা দিন।
শান্ত যে কবে আমাকে ধীরে ধীরে অনেক বেশী ভালবেসে ফেলেছিলো সেটা আমিও বুঝতে পারি নি।সেই ভালবাসা টা অসম্ভব রকমের পাগলামির ভালবাসা।আমার দিকে কেউ তাকালেও শান্ত যেন চোখ দুইটা তুলে নিতে পারলে শান্তি পেতো।
আজ আমি শান্ত কে ছাড়াই কলেজ গেছি।শান্ত কলেজের অনেক বড় পলিটিক্যাল লিডার ছিলো।রোজ মারামারি ঝামেলা অশান্তি লেগেই থাকতো তার।এটা ছিলো তার রোজ কারের অভ্যাস।হটাত ই সেদিন কলেজে অনেক বড় ঝামেলা হয় শান্ত সেদিন একা ছিলো ওর দলের লোক জন কেউ না থাকায় শান্তকে একা পেয়ে মারার চেষ্টা করছিলো। আমি দূর থেকে দেখে ঝামেলার মাঝে উপস্হিত হয়ে পড়ি।।শান্তর কপাল ঘেমে বৃষ্টির ফোটা পড়ছে আর চোখ দুটো রক্ত কমল হয়ে আছে। আমাকেই দেখেই শান্ত বলে মৌ কুইক এখান থেকে যাও। প্লিজ তুমি এখান থেকে যাও।কারণ শান্ত ভয় পাচ্ছিলো আমাকে যদি ওরা কিছু করে।আমি ওই ছেলে গুলাকে বলি আপনারা কলেজে আসেন কেনো?এসে কলেজের পরিবেশ নষ্ট করেন। আপনাদের জন্য তো কলেজে ছেলে পেলে ঠিক ভাবে ক্লাস ও করতে পারে না।আমার মাথা তখন ঠিক ছিলো না শান্ত কে এট্যাক করতে দেখে। তখন ই ওদের মাঝের একজন ছেলে বলে কি বললি এখানে এসে উপদেশ দিচ্ছির আমাদের বলেই কয়েক টা গালি দেই আর বলে শান্তর উপর খুব টান দেখছি না। বলেই ওরা ছুরি দিয়ে আমার হাত হালকা ভাবে কেটে দেই সাথে সাথেই রক্ত গড়িয়ে পড়ে।শান্তর দিকে তাকিয়ে আমি ফ্যাল ফ্যাল করে কেঁদে দিয়েছিলাম,,সেই দৃশ্য দেখে শান্তর কি হয়েছিলো জানিনা পাগলের মতো একা একটা ছেলে সব গুলা ছেলেকে খুব মেরেছিলো আর কুঁপিয়ে ছিলো।শান্ত যেন একটা জলন্ত অগ্নি হয়ে উঠেছিলো।সেই ঘটনার জন্য পুলিশ শান্ত কে এরেস্ট ও করেছিলো।কিন্তু ক্ষমতা আর পাওয়ারের জন্য শান্তকে পুলিশ এক ঘন্টা ও আটকে রাখতে পারে নি।টাকা দিয়ে মামা ছাড়িয়ে আনে।
শান্ত বাসায় ফিরে দেখে আমার প্রচন্ড জ্বর। আমার হাত টা ব্যান্ডেজ করা।অঝরে লুকিয়ে অনেক কেঁদেছিলো সে।আমার এক ফোঁটা কষ্ট শান্ত সহ্য করতে পারতো না।
এক রাতেই আমার জ্বর টা কমে গেছিলো কারন মামি আর পিহু আপু সারারাত আমার মাথায় জল পট্টি দিয়েছিলো।আর শান্তকে খুব বকেছিলো।আমার রাত তিন টার দিকে জ্বর একটু কমলে আমি বাইরে গিয়ে দেখি শান্ত ভাইয়ার রুমের দরজা খোলা কিন্তু শান্ত ভাইয়া রুমে নেই।আমি ছাদে গিয়ে দেখি একটার পর একটা সিগারেট টেনেই যাচ্ছে।শান্তর ভিতর টা জ্বলন্ত সিগারেট এর মতো জ্বলে যাচ্ছে।হটাত খেয়াল করে আমি দাঁড়িয়ে আছি শান্ত সিগারেট টা ফেলে দিয়ে আমার কাছে এসে আমাকে ভীষণ ভাবে জড়িয়ে ধরে। বলে বউ পাখি আমার জন্য এত কষ্ট পেয়েছো তুমি।একটা মেয়েদের মতো অঝরে কেঁদে যাচ্ছে,,, শান্ত কে আমি কখনো এত ইমোশনাল হতে দেখি নি।মনে যা থাকে ও কখনো প্রকাশ করে না।সেদিন যখন প্রথম বার ও বলেছিলো আমাকে,,
মৌ আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালবাসি।আমার নিজের থেকেও বেশী ভালবাসি।জানি আমাকে তুমি বিরোধী পক্ষ ভাবো। আমি অন্য দের মতো হাজার হাজার মেসেজ বা ইমপ্রেস করার মতো কিছুই করতে পারি নি।তাই হয়তো আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না।কিন্তু আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালবাসি বউ পাখি টা।আমি তোমার জন্য এইসব মারামারি ছেড়ে দিলাম।তোমার কি অনেক রক্ত বেরিয়েছিলো।আসলে আমি ও শান্ত কে প্রচন্ড ভালবেসে ফেলেছিলাম কিন্ত প্রকাশ করতাম না।আমি শান্ত কে বলছিলাম এবার ছাড়ো আমাকে গুন্ডা। আমি ঠিক হয়ে গেছি।তোমার জন্য আমার হাত কেটেছে বলে আমাকে পাম দিয়ে দিচ্ছো তাইতো।শান্ত বলে দেখ পিচ্চি আমার ভালবাসা নিয়ে ফান করবি না।
এই আমি কি একবারে পিচ্চি হ্যা তুমি আমাকে পিচ্চি বলো।
হ্যা পিচ্চি তো।
ছোট বেলা কত কোলে নিয়েছি আয় কোলে উঠবি নাকি।ছোট বেলা তো বার বার এসে পাপ্পি দিতি আর আমি ধরে মারতাম।
কি এত বড় সাহস আমাকে মারতে তবে রে।বলেই ওই মাঝ রাতে আমি শান্তকে ধরার জন্য ছুটছিলাম আর ও দৌড়াচ্ছিলো।দৌড়াতে দৌড়াতে দুজন সারাবাড়ি মাথায় করে নিয়েছিলাম আর দুজনে খুব হাসছিলাম।বাড়ির সবার ই ঘুম ভেঙ্গে যায় আমাদের দুষ্টিমি তে।মামা বলেন যাক ওদের ঝগড়ার সমাপ্তি এত দিনে হয়েছে।যা এবার একটু ঘুমিয়ে নে কাল আবার পিহুর গায়ে হলুদ।
বিগত এক মাসে আমার আর শান্তর মাঝে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। অনেক মান অভিমান আর পাল্লাপাল্লি।
কারন আমি মামি কে বলতাম আচ্ছা শান্ত ভাইয়ার যে চয়েজ এমন মেয়ে কোথায় পাবা তোমার ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য।তখনি শান্ত ভাইয়া বলতো আমার কাছে সব মেয়েকে পেত্নির মতো লাগে।আমার যে বউ হবে সে হবে বিশাল সুন্দরী আর স্মার্ট আর আমার মার খাওয়ার ধৈর্য থাকতে হবে। তখন মামি বলতো ও নাকি কোন বিদেশি মেয়েকে মন দিয়ে বসে আছে তাই ওর জন্য আমাদের ভাবনা নেই রে মা।শান্ত বলতো একদম ঠিক মা। বাট মৌ কে নিয়ে আমার চিন্তা হয় ওর জন্য ভালো ছেলে কই পাবো।কোনো আবুল টাবুল ছাড়া কে বা ওরে পছন্দ করবে যা বাট্টু ও। এত খাটো।মেয়ে চলে না।কত ভাবে যে আমাকে রাগিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
পিহু আপুর গায়ে হলুদের জন্য আমরা শপিং এর উদ্দেশ্য বের হলাম।আমি সুন্দর সুন্দর কিছু ড্রেস কিনলাম।সবার মনে এত হাসি আনন্দ কিন্তু হাসি নেই পিহু আপুর মনে।আমি এতদিনে বুঝে গেছি পিহু আপু আর পরশ ভাইয়ার মাঝে একটা রিলেশন আছে।পিহু আপু আমার কাছে সব টা শেয়ার করতো।
বিয়ের মাত্র সাত দিন আগে থেকে পিহু আপু আমাকে জানিয়েছে তার ভালবাসার কথা।এদিকে মামা পুরা শহর কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। মামা মামির মুখের দিকে চাইলে তাদের আনন্দের যেন শেষ নেই আমি তাদের এই খুশি টা নষ্ট হতে দিতে পারি না।আমি পিহু আপু কে অনেক বুঝালাম।আপু ও মেনে নিলো সব টা।কিন্তু আমার কাছে একটাই দাবি করলো বিয়ের আগে আমি যেন তাকে একবার পরশ ভাইয়ার সাথে দেখা করাই।আসলে আমার ও খারাপ লাগছিলো ভালবাসার মানুষ কে ছেড়ে অন্য কে বিয়ে করাটা খুব ই কষ্টের। আমি ও রাজি হই পিহু আপুকে পরশ ভাইয়ার সাথে দেখা করানোর জন্য।
আবার এদিকে শান্ত আমাকে বলতো তুমি কিন্তু পরশ কে বেশী প্রশ্রয় দিবে না।ও কিন্তু খুব বড় মাপের লুচ্চা।
চলবে,,,,
(গল্পের প্রথম কয়েক পার্ট একটু ন্যাকা টাইপ হলেও এই গল্প সবার হৃদয় স্পর্শ করবে। এই গল্পটা অনেক কষ্টের হবে শেষ পর্যন্ত)
0 comments:
Post a Comment